প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। |
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন দিনের সরকারি সফরে সোমবার (১১ আগস্ট) মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে তিনি এই সফরে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সফরে দু'দেশের মধ্যে ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।
এই সফরের মূল লক্ষ্য হলো দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা। আলোচনায় যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে সেগুলো হলো: শ্রমবাজার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, গভীর সমুদ্রের সঠিক ব্যবহার এবং কৃষি ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক।
রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পিডি) শাহ আসিফ রহমান এই সফরের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
শাহ আসিফ রহমান বলেন, সফরে দুই দেশের মধ্যে হালাল ইকোসিস্টেম, উচ্চ শিক্ষা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক মোট তিনটি নোট বিনিময় অর্থাৎ এক্সচেঞ্জ অব নোটস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দেশের সরকারপ্রধান তথা প্রধান উপদেষ্টা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং নোট বিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি উচ্চ প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া সফর করবেন। প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, বিডার চেয়ারম্যান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত এবং ঊধ্বর্তন সরকারি কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি জানান, প্রথম দিন আগামী ১১ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানো হবে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাবেন। পরের দিন ১২ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের পরপরই উভয় সরকার প্রধানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক এবং তাদের স্মারক সমঝোতা স্বাক্ষরিত হবে।
শাহ আসিফ রহমান বলেন, দ্বিতীয় দিন ১২ আগস্ট দুদেশের সরকার প্রধানের নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে, তার একটি সংবাদ সম্মেলন হবে। প্রধান উপদেষ্টার সম্মানে একটি রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন থাকবে। একইদিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা একটি ব্যবসায়িক ফোরাম অর্থাৎ বিজনেস ফোরামে অংশগ্রহণ করবেন। মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় তিনি অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
এই সফরে প্রধান উপদেষ্টা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক এবং প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন খাতে নতুন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ, অধিক পেশাদারদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি এবং কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সফরের তৃতীয় দিনে ১৩ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ইউনিভার্সিটি কেবাঙ্গাসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) এর চ্যান্সেলর এবং নেগেরি সেম বিলান প্রদেশের রাজা তোয়াংকু মুহরিজ ইবনি আল মারহু তোয়াংকু মুনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ইউনিভার্সিটি কেবাঙ্গাসান মালয়েশিয়া প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবেন। প্রধান উপদেষ্টা একই ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দেবেন।
শাহ আসিফ রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়া সফরকালে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, জ্বালানি সহযোগিতা, হালাল অর্থনীতি, সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, কৃষি, শিক্ষা ও জনযোগ অর্থাৎ পিপল টু পিপল কন্টাক্টসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকতর সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। এ সফরে বাংলাদেশের আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার এবং রিজিওনাল কম্প্রিহেন্সিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ আরসি ইপি অ্যাগ্রিমেন্টে যোগদানের আবেদন জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মালয়েশিয়াসহ আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অধিকতর সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানানো হবে।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত করার ক্ষেত্রে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে। আমরা আশাবাদী এই সফর দুই ভাতৃপ্রতীম দেশের মধ্যে সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা আস্থা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে আরো সুদৃঢ় করবে।